সোয়েব সাঈদ, রামু:

রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘোনারপাড়া এলাকায় উচ্ছেদ আতংকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাজারো নারী পুরুষ। আতংকিত গ্রামবাসী গতকাল (রবিবার) ৩০ এপ্রিল সকাল দশটায় রামু উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

সমাবেশ শেষে এলাকার প্রাচীন অধিবাসীদের জনবসতি ও বাস্তুভিটা রক্ষার দাবিতে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলির কাছে স্বারকলিপি প্রদান করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমাম হোসাইন, আবদুল হক ও কলিম উল্লাহ জানিয়েছেন, সম্প্রতি ওই এলাকায় ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দপ্তর সংলগ্ন জনবসতিপূর্ণ জমিতে বিজিবি কতৃপক্ষ স্থানীয়দের বাড়ি ভিটে পরিমাপ করে সেখানে লাল পতকা পূঁতে দেয়। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেঁসে উঠে স্থানিয় জনতা।

এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্দ জনতা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ তাদের বক্তব্যে বলেন, রাজারকুল ইউনিয়নের ডালারমুখ এলাকায় বন বিভাগ ও খাস জমিতে পূর্ববর্তীগণের মতো হাজারো মানুষ বসতি স্থাপন, ফলজ, বনজ ঔষুধি বৃক্ষের বাগান করে ভোগদখল করে আসছে। সেনানিবাস স্থাপনের কারনে উচ্ছেদ হওয়া পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা, নদী ভাঙ্গনের বাস্তুভিটা হারানো অনেক পরিবারও এখানে বসতি স্থাপন করেছে।

২/৩ বছর পূর্বে এখানে বিজিবি ৫০ ব্যাটালিয়ন দপ্তর স্থাপনের ফলে এলাকার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় এখানে বসবাসকারি বাসিন্দারা নিজ অর্থায়ণ ও ব্যাংক বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সূদে ঋন নিয়ে বাড়ি ভিটে সংস্কার ও পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছে। বর্তমানে এখানে মসজিদ, মক্তবসহ দুই শতাধিক বসত বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি উদ্যোগে একটি মিনি “বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম” স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, বিজিবি তাদের বরাদ্ধপ্রাপ্ত জমির চারপাশে সীমানা প্রাচির স্থাপন করেছে। বিজিবি দপ্তরের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে বিপুল জমি পতিত থাকার পরও অনাকাংখিতভাবে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকাটি অধিগ্রহনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জন্মভূমি ভিটে ছাড়া ও একমাত্র মাথাগুঁজার সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। যা প্রজা পীড়ন, মানবাধিকার লংঘন ও নাগরিক অধিকার খর্ব করার সামিল। সমাবেশে আসা হাজারো নারী পুরুষ তাদের সহায়টুকু রক্ষায় সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মানবিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সমাবেশ শেষে এলাকার প্রাচীন অধিবাসীদের জনবসতি ও বাস্তুভিটা রক্ষার দাবিতে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলির কাছে স্বারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগি জনতা। এসময় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নিকারুজ্জামান, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের ক্ষতি করে কোন কাজ করবে না। তবে উন্নয়ন হলে প্রাথমিকভাবে ক্ষতি হবে। পরে তা কেটে যায়। এজন্য বৃহত্তর স্বার্থে ওইখানে সরকারি স্থাপনা নির্মাণ হলে বর্তমানে যারা বসবাস করছে তাদের আগে পূর্নবাসন করা হবে। পূর্ণবাসন ছাড়া কোন স্থাপনা হবে না।

এর প্রতিকার চেয়ে আগেরদিন শনিবার (২৯ এপ্রিল) ওই এলাকার শত শত নারী-পুরুষ রামুর মন্ডলপাড়াস্থ ওসমান ভবনে গিয়ে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রাচীন অধিবাসীদের জনবসতি ও বাস্তুভিটা রক্ষার দাবিতে লিখিত আবেদন জানান। এসময় সাংসদ কমল তাদের উচ্ছেদ না করেই বিকল্প কিছু করার আশ্বাস দেন।

রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানান, যুগ যুগ ধরে শত শত নারী-পুরুষ এখানে বসবাস করে আসছে। তাই আকষ্মিকভাবে তাদের উচ্ছেদ করা উচিত হবে না। যদি উচ্ছেদ করতেই হয়, তার আগে যেন সবাইকে অন্যত্র পূর্ণবাসন করা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতংক আর ক্ষোভ দুটোই বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের সাজানো বসত-ভিটে ছেড়ে যেতে যেন কারো মন চাইছে না। রাজারকুল নারিকেল বাগানের পূর্ব পাশে রামু-মরিচ্যা সড়কের পার্শ্ববর্তী এ এলাকাটির অধিকাংশ বাড়িতে দেখা গেছে বিশাল আকারের ফলজ-বনজ গাছ আর সবজি খেত। রয়েছে পাকা, আধা পাকা সহ ছোট বড় অসংখ্য বাড়ি।